18-09-14-PM-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর: ভূমিদসু্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ভূমি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী তার প্রারম্ভিক বক্তৃতায় বলেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইজড করার মাধ্যমে ক্রটিমুক্ত, টেকসই ও জনকল্যাণমুখী আধুনিক ভূমি জরিপ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে৷

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন৷ এ সময় প্রধানমন্ত্রী, ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড করার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্টদের সর্তক থাকারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা৷

শিল্পায়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমি ব্যবহারে পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক পরিকল্পনার এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত সমস্যা নিষ্পত্তিরও প্রয়োজন বলে জানান তিনি৷এছাড়া, যত্রতত্র এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে না তুলে বরং উবর্রহিন জমিতে তা প্রতিষ্ঠার পরামর্শের পাশাপাশি ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ারও তাগিদ দেন তিনি৷জলাশয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভূমি দখলকারী আবাসন নির্মাতাদের ভূমিখেকো আখ্যায়িত করে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়কে শক্ত হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করলেও টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার মালিকানা থাকায় এই ভূমিখেকোরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ায় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন ৷প্রধানমন্ত্রী প্রারম্ভিক বক্তৃতায় বলেন, অনেকে জলাশয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভূমি দখল করছে৷ কিছু ভূমিখেকো লোক আছে, যারা দশ বিঘা জমি কিনে ২০ বিঘা দখল করে৷ কেউ তাদের প্রতিবাদ করলেই তাদের পেছনে লাগেতিনি বলেন, এরা এতোই শক্তিশালী- এদের মিডিয়া আছে, পত্রিকা আছে৷ কেউ প্রতিবাদ করলে, তাকে চোর বানিয়ে ছাড়ে৷প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, দুঃখজনক, এই মিডিয়া আমরাই দিয়েছি৷

গতবছর নির্বাচনকালীন সরকারের সময় ১৩টি নতুন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার যার মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলও রয়েছে৷ এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে রয়েছে সায়েম সোবহানের নাম, যিনি বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে৷ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপর অধীনে কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান নামে তিনটি পত্রিকা এবং বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে একটি অনলাইন সংবাদপত্রও রয়েছে৷

এর আগে গতবছর জুলাই মাসে যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান যমুনা টিভির স্থগিত থাকা লাইসেন্সও ফিরিয়ে দেয় সরকার৷ গত এপ্রিল মাসে যমুনা টিভি আনুষ্ঠানিক সমপ্রচারে আসে৷ যমুনা গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে দৈনিক যুগান্তর৷ দেশের বড় এ দুই শিল্প গ্রুপই ভূমি উন্নয়ন ও আবাসন খাতের ব্যবসার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে৷ বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও কয়েক বছর আগে এই দুই ব্যবসায়ী গ্রুপকে যৌথ অংশীদারিত্বেও একটি প্রকল্পের ব্যবসা চালাতে দেখা গিয়েছিল৷এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তদের আরো মনযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এই আধুনিকায়ন যেন যথাযথ হয়৷সব সমস্যার সমস্যা- ভূমি সমস্যা৷ ডিজিটাইজড হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে থাকার জায়গা পায়- তা নিশ্চিত করতে হবে৷ এজন্য উপজেলার মাস্টার প্ল্যান করা হচ্ছে৷পল্লীর জনপথ নামের একটি প্রকল্প একনেকে পাস করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামেও চার তলা দালান হবে৷ দালানের নিচে পোলট্রি খামার হবে৷ আর ছাদে ধান শুকাতে পারবে৷

ভূমিহীনদের জন্য চরাঞ্চলের পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী৷ ভূমিহীনদের মধ্যে চরাঞ্চলের ভূমি বিতরণ করতে হবে৷ সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে৷ সাথে সাথে উত্‍পাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাও রাখতে হবে৷ভূমির মালিকানাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে ওই অঞ্চলে ভূমি জরিপের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হাসিনা৷

আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে নেয়া কোস্টাল ল্যান্ড জোনিং প্রকল্প এবং উপকূলীয় চরভূমিতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বনায়নের কর্মসূচির কথাও তিনি এ সময় তুলে ধরেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ডিজিটাল জরিপসহ ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ-ভারত ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে ৪ হাজার ১৪৯.৫ কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অবশিষ্ট সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা আমরা পেয়ে গেছি৷ ৪৫ বিঘা জায়গাও পেয়েছি৷

বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগ আসবে৷ এজন্য কোন কোন ভূমিতে ফসল উত্‍পাদন হয় না- তা চিহ্নিত করতে হবে৷তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমির অভাব একটি বড় সমস্যা৷ এ দিকে খেয়াল রেখেই ভূমির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে৷ফসলী জমি ও বনাঞ্চল কেটে যেন শিল্প গড়ে তোলা না হয় সে দিকেও নজর দেয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী৷

নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো চওড়া নদী দরকার নেই৷ নদীর নাব্য বাড়াতে হবে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমানত্ম চুক্তি অনুমোদনে ভারত দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থল সীমানত্ম চুক্তি অনুমোদনের একটি বিল এখন ভারতের লোকসভায় রয়েছে৷আমি আশা করি, ভারত স্থল সীমানত্ম বিষয়ক দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে চুক্তিটি অনুমোদন করবে৷

তিনি বলেন, দু’দেশের সীমানত্মের মধ্যকার সীমানা রেখা টানা ও মানচিত্র তৈরির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে৷ এখন এ সমস্যা চিরতরে বিদায়ে ভারতের লোকসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, মুজিব-ইন্দিরা প্যাক্ট’এর আওতায় বহু আগে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতো৷ কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর কোন সরকার এক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নেয়নি৷ যদিও বাংলাদেশ এ প্যাক্ট স্বাক্ষর হওয়ার পর পর এটি অনুমোদন করে৷তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ৰমতায় এসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা রেখা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়৷ সে সময় ভারতের সঙ্গে সাড়ে ৬ কিলোমিটার ছাড়া প্রায় সব সীমানা রেখা চিহ্নিতের কাজ সম্পন্ন হয়৷তিনি বলেন, সমস্যার সৃষ্টি হয় মুহুরীর চর নিয়ে৷ অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে মুহুরী নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে৷ আনত্মর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারত নদীর মধ্যস্থলে সীমানা রেখা নির্ধারণ করে মুহুরীর চরের জমি দাবি করে৷ কিন্তু আমরা ভারতের দাবি গ্রহণ করিনি৷ আমরা ১৯৪৭ সালের সীমানত্ম পিলারের ভিত্তিতে জমির সীমানা নির্ধারণের ওপর জোর দেই৷ দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত আমাদের দাবি মেনে নেয় এবং আমরা ফেনীর নিকটবতর্ী সীমানত্মের মুহুরীর চরে ৪৫ বিঘা জমি লাভ করি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, উভয় পক্ষের সম্মতিতে ১৯৪৭ সালে পিলারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মুহুরী নদী ও মুহুরীর চর পায়৷ এছাড়া জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানত্মের অন্যান্য ছিটমহলের জমি নির্ধারণেরও কাজ সম্পন্ন হয়৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়সমূহের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন৷ ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান৷ এসময় প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সচিব সাইফুল ইসলাম ও ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷