bangla-team

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর: উঁচু ভবনে ও নিজেদের আড়াল করে দূর লক্ষ্যবস্তুতে হামলাই ছিল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যদের৷ এ লক্ষ্যে তারা প্রায় ছয় মাস যাবত্‍ খেলনা বিমানের আদলে কোয়াড হেলিকপ্টার বা ড্রোন তৈরির বিভিন্ন কারিগরি দিক নিয়ে গবেষণা করছিল৷বুধবার এই গবেষণা দলের আটক দুই সদস্য এমন তথ্যই দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)৷রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম এসব কথা জানান৷

এর আগে মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টায় গোপন খবর পেয়ে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক হোসেন সড়ক এলাকা থেকে এ দুজনকে আটক করা হয়৷ এসময় তাদের কাছ থেকে কোয়াড হেলিকপ্টার বা ড্রোন তৈরির সরঞ্জামাদি, বিভিন্ন ধরনের ইলেট্রনিক ডিভাইস ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়৷

আটকরা হলেন মুন্সীগঞ্জের তানজিল হোসেন বাবু (২৬) ও কুমিল্লার মো. গোলাম মাওলা মোহন (২৫)৷মোহন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র৷অপরদিকে অন্যজনের কারিগরি জ্ঞান বেশ ভাল বলে জানান মনিরুল৷যুগ্ন কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, তারা গত ছয়মাস যাবত্‍ ড্রোন তৈরি নিয়ে গবেষণা করছিল৷ তারা এটি তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল৷ তৈরি ড্রোনগুলো ২০-৩০ কেজি ওজনের বোমা বা কোনো বস্তু নিয়ে ২০-৩০ তলা উঁচু ভবন পর্যন্ত উঠতে সক্ষম হতো৷

তিনি জানান,জিজ্ঞাসাবাদে এ দুজন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে৷ তারা দু’জনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা মওলানা জসীম উদ্দিন রাহমনীর অনুসারী হিসেবে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷এ দুজনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে৷ সরঞ্জামাদি কেনা এবং কারিগরি সহযোগিতা প্রদানকারীদের তথ্য ও দলের অন্য সদস্যদের আটকের জন্য আদালতে হাজির করে তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি৷

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের উত্থান৷ গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই সংগঠনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছিল৷ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ প্রথম সারির ৬ নেতার মৃতু্যদণ্ড ২০০৭ সালে ৩০ মার্চ কার্যকর হয়৷ সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মী জেল হাজতে রয়েছে৷ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নানসহ প্রথম সারির নেতা ও বেশকিছু কর্মী জেলহাজতে৷ সে সুযোগে ভিন্ন নামে আবির্ভাব ঘটে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের৷ এ সংগঠনে জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের নেতাকর্মীরা রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি৷ দেশব্যাপী তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে৷

উগ্রপন্থী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে আটক করার পর তাদের কাছে ড্রোন বা কোয়াড হেলিকপ্টারের মতো রিমোট কন্ট্রোল চালিত ফ্লাইং মেশিন তৈরির সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ৷গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার শহীদ ফারুক হোসেন এলাকার একটি বাড়ি থেকে তানজিল হোসেন বাবু (২৬), মো. গোলাম মওলা মোহন (২৫) নামের ওই দুইজনকে আটক করা হয়৷

পরে মহানগর পুলিশ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ড্রোন কিংবা কোয়াড হেলিকপ্টার তৈরি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি তুলে সেসব স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল এই আনসারুল্লাহ সদস্যরা৷মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, ২৫/৩০ তলা উঁচু ভবনের ওপর দিয়ে উড়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে পারে- এমন কোয়াড হেলিকপ্টার বা ড্রোন তৈরির চেষ্টা করছিল তারা৷ এসব যন্ত্র তৈরির মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসও আমরা তাদের কাছে পেয়েছি৷আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের গুরু মাওলানা জসীম উদ্দিন রাহমানীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মোহন ও বাবু কথিত জিহাদি কার্যক্রমে শামিল হয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, তারা কোন কোন স্থাপনায় হামলা করতে চেয়েছিল, তাদের সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানতে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে মনুষ্যবিহীন এই ক্ষুদে উড়োজাহাজ ব্যবহারের ফলে ড্রোন নামটি এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত৷এসব যানে সংবেদনশীল ক্যামেরা থাকে, যার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানের জানান না দিয়েই শত্রুর ওপর নজরদারি করা যায়৷ আফগানিস্তানের যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কাজেও যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন ব্যবহার করেছে৷

গোয়েন্দাগিরি ছাড়াও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ,উদ্ধার অভিযানসহ বিভিন্ন কাজে এখন ড্রোন ব্যবহার করা হয়৷মনুষ্যবিহীন বিমান নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্‍সাহী তরুণরা ক্যামেরা বহনে সক্ষম ছোট আকৃতির দূর নিয়ন্ত্রিত বিমান তৈরি করেছে৷তবে বাংলাদেশের কোনো জঙ্গি বা উগ্রপন্থি সংগঠনের হাতে এ ধরনের প্রযুক্তি থাকার কথা এর আগে শোনা যায়নি৷

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম প্রথম আলোচনায় আসে গত বছর শেষ দিকে৷ অগাস্টে বরগুনা থেকে এ সংগঠনের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ পরদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে জসীমের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিডিসহ উসকানিমূলক বই উদ্ধার করা হয়৷