19-04-15-PM See_BD VS Pakistan_ODI Cricket-9

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯এপ্রিল : পাকিস্তানকে আরেকবার হারানোর জন্য ষোলো বছরের অপেক্ষা ঘোচার পর সিরিজ নিশ্চিত করতে মোটেও সময় নেয়নি বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় শতকে তিন দিনের মধ্যে পাকিস্তানকে দুইবার হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করেছে মাশরাফির দল। রোববার পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো সিরিজ জিতল তারা। বুধবার হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।

রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান করে পাকিস্তান।এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক মাশরাফি ও তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদকে শুরুতে দেখেশুনে খেলেন পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।বোলিংয়ে এসেই তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন রুবেল হোসেন।পেসার রুবেলের বলে স্লিপে সরফরাজ আহমেদ সৌম্য সরকারের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হলে ভাঙে ৩৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। নিজের প্রথম দুই ওভারে কোনো রান দেননি রুবেল। রুবেলের পাঁচ বল কোনোমতে ঠেকিয়ে দেয়া মোহাম্মদ হাফিজ ফিরেন নবম ওভারেই। আরাফাত সানির বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারে সাফল্য পান সাকিব আল হাসানও। তার বলে রিভার্স সুইং করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন পাকিস্তানের অধিনায়ক আজহার।পরের ওভারেই আঘাত হানেন নাসির হোসেন। ফাওয়াদ আলমকে বোল্ড করেন এই অফস্পিনার। এরপর সাকিব মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউর ফাদে ফেললে ভীষণ বিপদে পড়ে অতিথিরা। বিনা উইকেটে ৩৬ থেকে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারানো পাকিস্তান প্রতিরোধ গড়ে হারিস সোহেল ও সাদ নাসিমের ব্যাটে। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে হারিসকে বিদায় তাদের ১৭.৩ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।৩৪ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ১১১/৫। ৩৫তম ওভার থেকে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগি হয় তারা। মাশরাফির করা সেই ওভারে পরপর দুটি চার হাকিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে অতিথিরা।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে হারিসের উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিদায়ের কোনো ছাপ পাকিস্তানের ইনিংসে পড়তে দেননি নাসিম ও ওয়াহাব। সপ্তম উইকেটে ১১ ওভারে ৮৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন নাসিম। তার ৯৬ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ১টি ছক্কায়। ৫১ রান করা ওয়াহাবের ৪০ বলের ইনিংসটি ৫টি চার ও ২টি ছক্কা সমৃদ্ধ। নাসিম, হারিস ও ওয়াহাবের দাপটে শেষ ১৬ ওভারে ১২৮ রান যোগ করে পাকিস্তান। টাইগারদের হয়ে সাকিব দুটি আর মাশরাফি, সানি, রুবেল, নাসির একটি করে উইকেট তুলে নেন।

অনবদ্য ইতিহাস। রচয়িতা সেই দু’জনই। যে দু’জন ১৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল আর নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই ইতিহাস রচিত হয়েছে। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় কোনো দলের বিরুদ্ধে এ অর্জন টাইগার টিমের। রোববারের এ ম্যাচে সাত উইকেটে জয়ের মাধ্যমে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে থাকলো বাংলাদেশ। এখন নিশ্চিতভাবেই লক্ষ্য বাংলাওয়াশ। ডে নাইট এ ম্যাচে টসে জিতে প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি দলপতি আজহার আলী। কিন্তু তার বড় রান তোলার স্বপ্ন দুমড়ে-মুচড়ে দেন টাইগার বোলাররা। পাকিস্তানকে বেধে ফেলেন ২৩৯ রানে। ২৪০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাও দারুণ হয় বাংলাদেশের শেষ পর্যন্ত তামিম-মুশফিকের অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে সাত উইকেট হাতে রেখে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ২৪০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে আগের ম্যাচে শতক হাঁকানো টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ওপেনিংয়ে নিজেকে প্রমানের অপেক্ষায় থাকা সৌম্য সরকার। তবে, ইনিংসের তৃতীয় ওভারে জুনায়েদ খানের বলে পরপর তিনটি চার মারা সৌম্য পঞ্চম বলে উইকেটের পিছনে সরফরাজের তালুবন্দি হন। আউট হওয়ার আগে তিনি ১১ বলে ১৭ রান (৪টি চার) করেন।২২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানো টাইগারদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ১০০ রানে। সাঈদ আজমলের করা ১৫তম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন মাহামুদুল্লাহ।পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় এক উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান।

পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের ঝড়ো ইনিংসের কাছে তামিমের ইনিংসটি ঢাকা পড়ে যায়। মুশফিকুর রহিম ৬৫ রান করে আউট হন । পরে সাকিব নামেন তিনি অপরাজিত থাকেন ৭ রানে।কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে সিরিজ জিতিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ঠিকই অর্জন করে নিলেন বাঁহাতি বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান তামিম।ম্যাচের শুরু থেকেই পাকিস্তানি বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালাতে থাকেন তিনি। ঘূর্ণি জাদুকর সাঈদ আজমল, ফাস্ট বোলার ওয়াহাব রিয়াজ ও রাহাত আলিকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাত্র ৩১ বলেই অর্ধশতক তুলে নেন তামিম।অর্ধশতকেই থেমে না গিয়ে দলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এক/দুই রান সংগ্রহ করে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন। আর মাঝে মাঝেই দৃষ্টিনন্দন এক একটি শটে দলের রানের চাকা সচল রেখে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ শতক।১১৬ বলে ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি তামিম সাজান ১৭টি চার ও একটি ছক্কায়।১৪৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ৩৭.৮৩ ব্যাটিং গড়ে ৫৩৭৩ রান সংগ্রহ করেন তামিম ইকবাল। টাইগারদের খেলা দেখতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ যখন ম্যাচে এখন জয়ের পথে। লাইভ টেলিকাস্টে টেলিভিশন স্ক্রিনে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিগ স্ক্রিনে প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর পরপরই মাঠে দর্শকদের মধ্যে দেখা যায় বাড়তি উচ্ছ্বাস।প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানার ছেলে রেদোয়ান ববি সিদ্দিক ও তার স্ত্রী পেপপি সিদ্দিক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, সহকারী প্রেস সচিব মাহবুবুল হক শাকিল তার সঙ্গে রয়েছেন।এদিকে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজের টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় করে নেওয়ায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৩৯/৬ (আজহার ৩৬, সরফরাজ ৭, হাফিজ ০, হারিস ৪৪, ফাওয়াদ ০, রিজওয়ান ১৩, নাসিম ৭৭*, ওয়াহাব ৫১*; সাকিব ২/৫১, নাসির ১/১৭, রুবেল ২/২৭, আরাফাত ১/৪১, মাশরাফি ১/৫২)।বাংলাদেশ: ৩৮.১ ওভারে ২৪০/৩ (তামিম ১১৬*, সৌম্য ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, মুশফিক ৬৫, সাকিব ৭*; আজমল ১/৪৯, রাহাত ১/৫৭, জুনায়েদ ১/৬১)।