রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন ও ই-ভোটিং চালুর যে প্রস্তাব দিয়েছে- তার বিরোধিতা করেছে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বর্তমান সরকার উন্নয়ন নয়, দেশকে দুর্নীতির মহাসড়কে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশের ১ কোটি ১০ লাখ শিক্ষিত বেকার চাকরি পাচ্ছে না, তাহলে উন্নয়ন কোথায় হচ্ছে?

শুক্রবার সকালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ছাত্রসংগঠন জাগপা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রিজভী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।বৃহস্পতিবার সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন। গুম-খুন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, চারদিকে অধঃপতনÑএসব হচ্ছে উন্নয়ন।রিজভী অভিযোগ করেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের নামে সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের উন্নয়ন হচ্ছে।রিজভী দাবি করেন, একতরফা সংসদে নিজেদের মনমতো নানা আইন করে বর্তমান সরকার একদলীয় শাসন কায়েম করছে। কিন্তু জনগণ কখনোই তা মেনে নেবে না। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সার্চ কমিটি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, যে কমিশনের ওপর বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ সব দল আস্থা রাখতে পারবে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তামন একতরফা পার্লামেন্টে আইন হলে তা সবার গ্রহযোগ্যতা পাবে না। আর ইলকট্রনিক ভোটিং মেশিন ফেরালে তাতে নির্বাচনে ‘ডিজিটাল কারচুপি হবে। ভোট ডাকাতি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, রাত ৩টা সময় ব্যালট বাক্স উধাও, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের যাওয়ার পরিবর্তে সেখানে অন্য প্রাণীদের যাতায়াত- ইত্যাদি সব কিছুতে আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ স্টাইল দিয়েছে। ইভিএম চালু করলে আরেকটি দুর্নীতির হবে।সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের কথা বলা থাকলেও সাড়ে চার দশকেও তা প্রণীত না হওয়ায় গতবারের মত এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ইসি গঠনের উদ্েযাগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্র“য়ারিতে নতুন যে কমিশন দায়িত্ব নেবে, তাদের অধীনেই হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন।রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে।এছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’ এর চালুর কথাও বলা হয় আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে।

এর বিরোধিতায় বিএনপি নেতা রিজভী সরকারপ্রধাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি নিজের মতো করে যদি আইন করেন তাহলে তো সব দলের সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন কমিশন গঠন হবে না। আপনি কী আইন করবেন সেটা নিয়ে মানুষের মনে বিরাট সন্দেহ আছে। আপনার প্রত্যকটি আইন হচ্ছে গণ-বিরোধী, লুটপাটের পক্ষে, প্রত্যেকটি আইন হচ্ছে দুর্নীতির পক্ষে।বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি করে, সেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে হবে।আমাদের দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন যে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানে এর স্পষ্ট আভাস আছে। সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে করুন। তার সাথে যদি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করার জন্য আরও কিছু উপাদান যুক্ত হয়, যুক্ত হতে পারে।রিজভী বলেন, সরকার যদি সবার মতামতের বাইরে গিয়ে ‘নিজেদের পছন্দসই লোকদের ইসিতে বসাতে চায় অথবা আইন প্রণয়ন করে, তা জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না।নতুন নির্বাচন কমিশনের যারা অধিকর্তা হবেন, তাদের প্রতি যেমন আওয়ামী লীগের আস্থা থাকতে হবে, তেমনি বিএনপিরও আস্থা থাকতে হবে, ২০ দলীয় জোটেরও আস্থা থাকতে হবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও আস্থা থাকতে হবে। সেই আস্থা না থাকলে একতরফা নির্বাচন কমিশন গঠন হলে এটি কেউ মেনে নেবে না।

ই-ভোটিংয়ের বিরোধিতায় রিজভী বলেন, ইভিএম অনেক ত্রুটি থাকতে পারে বলে ত্যাগ করতে হয়েছিল। এমনিতেই কারচুপির জন্য সব জায়গায় মানুষ তটস্থ। দুর্নীতির একটি নতুন মাত্রা দেয়া হয়েছে ডিজিটাল কারচুপিতে।পল্টনে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে রিজভী প্রধানমন্ত্রীর ভাষণেরও সমালোচনা করেন।বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, উনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। আমি বলতে চাই, আজকে আমরা একটা মিথ্যাচারে বসবাস করছি। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের রাজকোষ থেকে ৮০০ কোটি টাকা উধাও, আমরা দেখেছি, পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও। মহাসড়ক-সেতু-ব্রিজ-ফ্লাইওভারের উন্নয়ন ব্যয় তিন-চারগুণ বাড়ছে। এ হচ্ছে- শেখ হাসিনার উন্নতি।জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে জাগপার সহসভাপতি রেহানা প্রধান, মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, সহসভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, জাগপা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রুবেল আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।