নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দায়ে প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এই মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যে ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ আদালত দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন র‌্যাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা। আসামিদের মধ্যে আরও ১৪ জন রয়েছেন যারা র‌্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জন আসামির মধ্যে নূর হোসেনসহ ২৩ জন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রায় শোনেন। বাকি ১২ আসামি পলাতক রয়েছেন।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলাকে একটি হিসেবে গ্রহণ করে রায় দেন আদালত। সংক্ষিপ্ত রায়ে শুধুমাত্র আসামিদের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলেই এসময় জানান বিচারক। সোমবার সকাল ৯ট ৫০ মিনিটে গ্রেফতারকৃত ২৩ আসামিকে আদালতের হাজতখানা থেকে কাঠগড়ার লোহার খাঁচায় এনে রাখা হয়। সকাল ১০টা ০৩ মিনিটে আদালতের এজলাসকক্ষে আসন নেন বিচারক। আর ১০টা ৫ মিনিটেই সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে এবং নূর হোসেনসহ ৫ জনকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ থেকে আদালতে নেওয়া হয়। এর আগে সাত খুনের ঘটনায় দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করেন আদালত। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল এবং অপরটির বাদী নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। মামলার সর্বশেষ ধাপ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত বছরের ৩০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে রায়ের জন্য ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ কে তারিখ হিসেবে ধার্য করেন আদালত। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনের ফাঁসি এবং বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।

 

রায়ের পর কারাগারের পথে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টার কিছু সময় পর রায় ঘোষণা শেষে আসামিদের একে একে এজলাস থেকে বের করে কঠোর নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় ৠাব, পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। রায়ে সাত খুনের দায়ে নূর হোসেন ও ৠাবের ৩ কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনজীবী ছাড়া অন্য কাউকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আদালত চত্বরের বাইরে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে সবাইকে তল্লাশি করা হচ্ছে।

৭ খুনের ঘটনায় দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ হয়েছে। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল এবং অপরটির বাদী নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

মামলা দু’টির চার্জশিটে ৩৫ জন অভিন্ন আসামি। তাদের মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার, ১২ জন পলাতক রয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, ৠাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা, ৠাবের সদস্য এসআই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়্যব, সিপাহী নুরুজ্জামান, সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।

পলাতক আসামিরা হলেন- নূর হোসেনের সহযোগী ভারতে গ্রেফতার সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন এবং ৠাবের আট সদস্য কর্পোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলী, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএসআই কামাল হোসেন ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান। দু’টি মামলারই অভিন্ন সাক্ষী ১২৭ জন করে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১০৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।